You are currently viewing জীবনে অশান্তি অস্বাভাবিক আচরনের প্রসূতি

জীবনে অশান্তি অস্বাভাবিক আচরনের প্রসূতি

খুলনার একটি ফুড গ্রুপে অনেক প্রশংসা করেছিলাম একটি রেস্টুরেন্টের। প্রায় ৫/৬ বছর আমি এবং পুরো পরিবার ওখানে খেয়ে আসছি। একটা ছেলে সেখানে কমেন্ট করেছে “এটা পেইড রিভিউ কিনা অথবা আমি জীবনে প্রথমবার চাইনিজ খেলাম কিনা।” সময়ের সাথে টিচিং জব আমাকে অনেক ধৈর্য শিখিয়েছে, তাই bully দেখলে আমি চট করে মাথা গরম করিনা বেশিরভাগ সময়ে। অনেক শান্ত হয়ে তার খোজ নিলাম। জিজ্ঞেস করলাম ‘তার জীবনে সুখের অভাব কিনা, কষ্টে আছে কিনা।’ বললাম সে যেটা ভেবে সুখ পায় সেটাই ধরে নিক। নতুন খাচ্ছি চাইনিজ কিংবা টাকা পেয়েছি। দেখলাম ছেলেটি কমেন্ট মুছে দিয়েছে। মনে হয় আমাকে আর সে লজ্জায় ফেলতে চায়নি।


যা হোক! মানুষ এমন কেন করে সেটা হচ্ছে প্রশ্ন। সরাসরি বলতে পারত “তার ওখানকার খাবার জঘন্য লাগে।” আমি একটি কেয়ার রিয়াক্ট দিতাম, অথবা স্যাড। কিন্তু না। He choose to bully. টিটকারি মেরে শুনাতে চাচ্ছিল। একদম অচেনা একটা মানুষকে কেউ টিটকারি কেন মারতে চাইবে? দুইটা কারণ হতে পারেঃ রেস্টুরেন্টের মালিক তার শত্রু। অথবা প্রবল চান্স – সে সুখে নাই। মানুষ সুখে না থাকলে এমন করে। নিজের অশান্তি অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে, তাকে এলোমেলো করে কিংবা অপ্রস্তুত করে মজা পায়। সাময়িক শান্তি লাভ করে। এজন্যই সোশ্যাল মিডিয়াতে এখন এরকম আচরণ বেশি দেখা যায়। সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পারেনা। এমনভাবে বলবে যেন খোঁচা লাগে, কথায় ব্যাথা পায়। এতে সে ব্যক্তি মনে পৈশাচিক তৃপ্তি লাভ করে যদি কথা দিয়ে ব্যাথা দিতে পারে। আর দুই-একটা আমার মতো পেলে অন্য শিকার খোজে। এই যে ক্রিকেটার, নায়ক-নায়িকাদের কমেন্ট সেকশনে এত ঘৃণ্য কমেন্ট, এত নোংরা আচরণ – এগুলা সুখের অভাবের লক্ষণ। আমি সাইকোলজির মাষ্টার না হলেও জীবন থেকে বুঝি মানুষ কখন কেন পাগলের মতো আচরণ করে বসে। শান্তি না পেলেই মানুষ অশান্তি করতে দৌড়ায়। জীবনের সব ক্ষেত্রে এবং দেশের সব ক্ষেত্রেও এই কথাগুলা প্রযোজ্য।


অন্যদিকে যাবো ভাবছিলাম, কিন্তু আজ ফেসবুক পর্যন্তই থাকি। ফেসবুক আমার কাছে বিনোদনের জায়গা। এটা যদি এমন হয়ে যায় যে মানুষ এখানে এসে ফ্রাস্ট্রেশন থেকে দুরে যাওয়ার পরিবর্তে আরও ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে যাচ্ছে তাহলে সে কিছু একটা ভুল করছে। এখানকার কোনও কিছুই সিরিয়াসলি নেওয়া উচিত না। আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি – স্কুল, কলেজ, রাস্তা-ঘাটে যেসব মানুষের সাথে আমি মিশতাম না, কথা বলতে চাইতাম না – সেও ফেসবুকে আমার ব্যাপারে কমেন্ট করার সুযোগ পায়, আমাকে কিছু একটা শুনানোর সুযোগ পায় যা সে আমার সামনে দাড়িয়ে করতে পারবেনা। তাই এমন সিচুয়েশন আসবে। তখন রেগে উত্তর দিলে সে আমাকে ওই নিজের পর্যায়ে নামিয়ে পৈশাচিক হাসিটা দেবে। বুঝতে হবে, সে কষ্টে আছে তাই এমন করছে। হয়ত পড়াশুনার চিন্তা, কিংবা ফাইনান্সিয়াল চিন্তা, অথবা আশপাশ থেকে শিখতে পারেনি – ভাল আচরণ কিভাবে করে। সেজন্য, ফেসবুককে একটা রঙ্গমঞ্চ হিসাবে ভাবাই বুদ্ধিমানের কাজ।


অতনু সোম
সিএসই ফ্যাকাল্টি,
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।