Cultural Festival

ধার করা সংস্কৃতি মনের মতো হবেনা স্বাভাবিক

সাম্প্রতিককালের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রুচিহীন নাচ কিংবা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে র‍্যাপ/কাচা বাদাম গানের সাথে নাচ দেখে যদি আপনি আচমকা হতাশ হয়ে পরেন তাহলে আপনি আসলে বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে সরে আছেন। প্রথমেই বলে নেই **আমি এরকম কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করছিনা, আমি কারণ ভাবার চেষ্টা করছি এবং দেখার চেষ্টা করছি গলদ রয়েছে কোথায়**। যুগ বদলেছে। যুগের সাথে আমার দেশের কালচার বদলায়নি। সংস্কৃতি তাদের আর সেটা দিতে পারছেনা যা ধরে রেখে এই জেনারেশন আঁকড়ে থাকবে। সেই মান্ধাতার আমলের গানই বছরের পর বছর বাজিয়ে যাবে এটা তো আশা করা যায়না। ওদের সামনে অল্টারনেট কোথায়!! আপনি আমি যা শুনে বড় হয়েছি সেটাই এরাও শুনে যাবে বা তাদের চয়েসও একই থেকে যাবে এমন ভাবনা তো অবান্তর ছাড়া কিছু নয়। পড়াশুনার চাপ ছাড়া সিস্টেম না দিয়েছে মুক্ত মনে বেড়ে ওঠার পরিবেশ না শিখিয়েছে আমাদের কালচারটা কেমন। কয়টি পরিবার আছে যারা শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার পথ দেখিয়েছে তাদের পরিবারে! আমাদের টেক্সটবুক তো সংস্কৃতি থেকে যোজন যোজন দূর, উল্টো পারলে সংস্কৃতির গলা টিপে ধরতে চায় এমন অবস্থা। পেপারে পড়েছি কি সিস্টেমেটিক ওয়েতে আমাদের সময় বইয়ে থাকার ক্লাসিক কবিতা, গল্প কিভাবে বদলে দেওয়া হচ্ছে। যাক সেসব থাক। অনুষ্ঠান আয়োজকদের চরম ভুলে ছিল তাতে সন্দেহ নেই, তবে আমাদের কালচারই নষ্ট হতে বসেছে আসলে। ধার করে চলছি আমরা আর এসব কর্মকাণ্ড তারই প্রতিচ্ছবি।

আজ ইন্টারনেট আছে। ভারতে কিংবা বিশ্বে যে গান বের হচ্ছে তা চলে আসছে হাতের মুঠোয়। আপনি কি তাহলে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেবেন! তাতো আর সম্ভব না। তাহলে সম্ভব কোয়ালিটি গান বানিয়ে এদের চাহিদা মিটানো। সেটা কি হচ্ছে আমাদের দেশে? শেষ কবে একটা গান শুনেছেন যা আপনার বা তরুণ সমাজের ভালো লেগেছে! বছরে কয়টা গান বের হচ্ছে আমাদের দেশে যা তরুণ-তরুনীর টেস্টের সাথে যায়, আধুনিকতার সাথে যায়! টেস্ট আধুনিকতা বাদ দিন, কয়টি গান হচ্ছে যা মনে এসে লাগে, যা প্রাণ ঠাণ্ডা করে দিতে পারে। সুস্থ কিংবা তথাকথিত আধুনিক(!!) কোনওটিই তো পূরণ হচ্ছেনা। আপনার সংস্কৃতিতে যখন ভয়েড তৈরি হবে সেখানে বিদেশি সংস্কৃতি তো জায়গা দখল করবেই। কেন পণ্যের অবস্থা দেখতে পান না? আপনার দেশে কোনও পণ্য উৎপাদন না হলে মানুষ কি সেটা ব্যবহার বন্ধ করে দিচ্ছে! আমদানি করছে না বাইরে থেকে! সংস্কৃতি ভিন্ন ট্রিটমেন্ট পাবে আশা করেন কি করে! একটা দেশাত্মবোধক গান শুনেছেন শেষ ৫ বছরে যাকে ভালো এবং ক্রিয়েটিভ বলা যায়? আমার যুগে তাও ব্যান্ড সঙ্গীত ছিল যার জন্য আমরা কিছু বাংলা গান পেয়েছিলাম যা সম্মিলিত অনুষ্ঠানে তরুণ-তরুণী বাজাতে পারে। জেমসকে পেয়েছি আমরা, আইয়ুব বাচ্চুকে পেয়েছি। আর এখন! আমরা পেয়েছিলাম “মেলায় যাইরে”। এখনকার ব্যান্ডের গান শুনেছেন! একদল গায় “আমি তুমি আকাশ বাতাস” এই ৪ শব্দের মধ্যে, আরেক দল গান গায় যেন জনমের মতো ছ্যাকা খেয়েছে, প্রেমিকাকে আর ভুলতে পারছেনা। আর একদল আছে ডিপ্রেশনের গান নিয়ে। এই বাজাবে অনুষ্ঠানে!!

নতুন গান বানানোর উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে আমাদের শিল্পীরা। আমাদের বাজেটও এত কম যে ভালো গানের পেছনে সময় দেওয়ার মতো সময় নেই শিল্পীদের। ভারতে দুইভাবে গানের শিল্পীরা টিকে আছে। মুভির গান এবং লাইভ শো। আমাদের দেশে মুভির বাজেট বলে কিছু নেই, লাইভ শোয়ের পরিমাণ কম। পুরো দেশে সারাবছরে কয়টি প্রোগ্রাম হয় হাতে গুনে বের করা যাবে। শিল্পীদের জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে, সাস্টেইনেবল মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির পথ তৈরি করতে হবে, নতুন শিল্পীরা কিভাবে উৎসাহ পাবে সে পথ তৈরি করতে হবে, মিউজিক কম্পিটিশনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তবে যদি আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে আবার খুঁজে পাই!

_____

অতনু সোম
ফ্যাকাল্টি, সিএসই,
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।