Coxs Bazar AI Generated

কক্সবাজার ট্যুরের আরেকটি রিভিউঃ হোটেল, রেস্টুরেন্ট, এবং কিছু টিপস

Hotel Neeshorgo, Hotel The Cox Valley, Pacific Beach Lounge Cafe, Sea Lamp Beach Cafe, Sandy Beach Restaurant, Senorita Beach Cafe, Sun Dancer Restaurant

আমার ২০২১ ট্যুরের পোস্ট আছে। যেখানে আমি কোথায় কোথায় ঘুরেছিলাম, কক্সবাজারে কোথায় কোথায় ঘোরা যায়, কিভাবে সেটা লিখেছিলাম। এবার কোথাও ঘুরিনাই, ৬ মাসের বাচ্চা ছিল সাথে, শুধু বীচে সময় কাটিয়েছি এবং রেস্টুরেন্ট ট্রাই করেছি। মোটেই বাজেট ফ্রেন্ডলি ট্র্যুর নয়।

যাওয়া-আসাঃ ঢাকা থেকে গেছি গ্রিনলাইনে, বিজনেস ক্লাস। স্লিপারে আমাদের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত খারাপ তাই বিজনেস ক্লাস। এসেছিও গ্রীনলাইন বিজনেস ক্লাসে। কিন্তু আসার সময় তাদের বাস নষ্ট হয়ে যায়, বেশ ভুগতে হয়েছিল। বিকল্প দিয়েছিল, ১ ঘণ্টা নষ্ট হয়েছে, পরের বাসে সিট দিয়েছে শেষ লাইনে।

হোটেল নিসর্গঃ আমি এই হোটেলের প্রতি বায়াসড। গতবছরও গিয়েছি এবং এবছরও। এই হোটেল কক্সবাজারের বেস্ট হোটেল মনে হয় আমার কাছে। এবার প্ল্যান ছিল কৃচ্ছ্রতা সাধনের জন্য সাধারণ মানের হোটেলে থাকব, কোনও তারকা হোটেলে যাবনা। কিন্তু কিছু সমস্যা ফেস করায় শেষ পর্যন্ত আমাদের নিসর্গতে যেতেই হয়েছে। প্রথম সমস্যাঃ মশা। আমরা যখন গিয়েছি তখন বীচে সন্ধ্যায় মশার কারণে বসাই যাচ্ছিলনা। বাচ্চা নিয়ে কতক্ষণ হেটে পারা যায়। রেস্টুরেন্টে গিয়েও ঘণ্টা খানেকের বেশী সময় পার করা কঠিন। অগত্যা হয় বীচে হেটে বেড়াতে হবে, নয়ত হোটেল রুমে ফিরে গিয়ে বসে থাকতে হবে যেটা কমদামী হোটেলে বেশ বোরিং। দ্বিতীয়তঃ দিনের বেলায় রোদে ঘুরতে না বের হলে সময় পার করা কঠিন। এই সমস্যার জন্যই নিসর্গতে গিয়েছি এবং নিসর্গ হতাশ করেনি। তাদের কফি জোন, বারবিকিউ জোন সময় কাটানোর জন্য আদর্শ জায়গা। কফি জোনে নকল ঘাস লাগানো, যেখানে বসে অনায়াসে সমুদ্রের শব্দ পাওয়া যায়। বারবিকিউ জোন থেকে সমুদ্র দেখা যায় যেমনটা দেখা যায় হিমছড়ি থেকে, অসাধারণ ভিউ। এখানে একটি কোথা না বললেই নয়, কফি কিংবা বারবিকিউ না খেলেও আপনি এই জায়গা গুলি ২৪ ঘণ্টা যেতে ও বসতে পারবেন। এরপর নিসর্গর ইনফিনিটি পুল <3 সেখানে সমুদ্র এবং পাহাড়ের দর্শন একসাথে। ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট প্লেস টু ক্যাপচার মেমোরেবল ফটোস। ১ ঘণ্টা বলা থাকলেও কেউ এসে বলেনি যে অনেক হয়েছে এবার উঠুন 😀 এসবের জন্যই নিসর্গ ভালো লাগে। নিসর্গ থেকে ১ মিনিটের হাটা দূরত্বে এক্সোটিকা বীচ। সকালে ও বিকালে ক্যামেরাম্যানদের প্যানপ্যানানি থেকে দূরে, মালা বিক্রেতা, হেড ম্যাসেজওয়ালা থেকে দূরে কিছুটা সময় শান্তিতে কাটানোর জন্য পারফেক্ট বীচ। সকাল ৭-৯ টা এই বীচে কোলাহল থেকে দূরে হাটতে অসম্ভব ভালো লাগে। নিসর্গতে ছিলাম ৯ তলায় সি-ভিউ রুমে। অসংখ্য ধন্যবাদ নিসর্গর টিপু ভাইয়াকে যার জন্য অসম্ভব সুন্দর ভিউসহ একটি রুম পেয়েছিলাম আমরা। ৭-৯ তলার সি-ভিউ রুম বেস্ট। তবে নিসর্গর হিল-ভিউ রুমও সুন্দর। আমরা দুই ধরনের রুমেই থেকেছি। সার্ভিস পেয়েছি খুবই ভালো। বাচ্চার সেরেল্যাক বানানোর প্রয়োজন পরেছিল, নিসর্গর ম্যারিন ড্রাইভ রেস্টুরেন্টের সেফ বানিয়ে দিয়েছেন অত্যন্ত যত্ন সহকারে। যতবার সার্ভিস লেগেছে, তারা দ্রুত সার্ভিস দিয়েছেন। নভেম্বরে হিল-ভিউ চলছিল 3.6k এবং সি-ভিউ 4k. গতবছর ডিসেম্বরে সি-ভিউ ছিল 5k. তবে নিসর্গতে ভালো রুম পেতে চাইলে বেশ কিছু সময় পূর্বে বুক করা প্রয়োজন। সামনে কক্স যখন যাবো আবারো নিসর্গতে অবশ্যই থাকব।

হোটেল কক্স ভ্যালীঃ প্রথম দুইদিন ছিলাম এখানে। মূলত খুলনা থেকে একটা হোটেল বুক করে যেতে চেয়েছিলাম যাতে কক্সবাজার নেমে সকালে হোটেল খুঁজতে না হয়। নিরাপত্তা ছিল মুখ্য বিষয়। ইউটিউবের একটি ভিডিওতে এই হোটেলকে অন্যতম নিরাপদ হোটেল বলেছিল এবং সার্ভিস নিয়ে সন্তুষ্টির কথা বলেছিল। তাই এখানে বুক করেছিলাম। ১৫০০ টাকা নন-এসি। তারা বারবার ২০০ টাকা বেশি দিয়ে এসি নিতে বলছিল। পরে গিয়ে দেখি এসি-রুমই দিয়েছে শুধু রিমোট দেয়নি, সেটাই নন-এসি রুম 😀 যাহোক, আমরা অনেক ভালো সার্ভিস পেয়েছি। রুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিল। ভোর ৭ টায় কক্সবাজার পৌছেছিলাম, ৭ টায় তারা আমাদের একটা টেম্পোরারি রুম দিয়েছিল। বেলা ১২ তায় এসে রুম ক্লিন করে দিয়ে গেছে। টিভি ছিল রুমে যেটা চলছিল। ওয়াশরুম পরিষ্কার পেয়েছি। যেহেতু ঘুমানো ছাড়া আমরা এই হোটেলে তেমন একটা সময় কাটাইনি, তাই আমাদের ভালোই কেটে গিয়েছে এই হোটেলে। তবে একটা সমস্যা – সুগন্ধ্যা বীচ থেকে ১০-১২ মিনিটের হাটা দূরত্বে, প্রায় ২০ টাকা রিকশা ভাড়া লাগে। কিন্তু আমাদের প্রথম ইস্যু ছিল নিরাপত্তা, আমাদের নিরাপদ মনে হয়েছে।

সেনোরিটা বীচ ক্যাফেঃ এক্সোটিকা সাম্পান হোটেলের সাথে ও পেছনে অবস্থিত এই রেস্টুরেন্টের পরিবেশ অসম্ভব সুন্দর লেগেছে আমাদের। প্রথমবার গেলাম। সমুদ্রের শব্দ শুনতে শুনতে খাওয়া যায়। তাদের লাইটিংটা বেশি ভাল লেগেছে। সন্ধ্যার পর যাওয়াই উপযুক্ত মনে হয়েছে। বসার এরেঞ্জমেন্টও ইউনিক। দাম মধ্যবিত্তের নাগালের ভেতর। এসব রেস্টুরেন্টে আমরা গিয়েছি সময় কাটাতে, তাই খাবারের টেস্ট সার্ভিস ইত্যাদিতে তেমন গুরুত্ব দেইনি, মনেও নেই। সব অন-এভারেজ ভাল। একটি সন্ধ্যা সেনোরিটা ক্যাফেতে গল্প করে কাটাতে ভালোই লেগেছে।

প্যাসিফিক বীচ লাউঞ্জ, সি-ল্যাম্প বীচ, স্যান্ডি বীচ রেস্টুরেন্টঃ এবারই এই রেস্টুরেন্ট গুলি প্রথম দেখলাম। এগুলি সন্ধ্যা কাটানোর জন্য দারুণ জায়গা। এদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মশা। কলাতলি থেকে সুগন্ধ্যা বীচের মাঝখানে এই তিনিটি রেস্টুরেন্ট। বীচ থেকে হেটে যাওয়া যায় এই রেস্টুরেন্ট গুলিতে। বীচের দিকে সুন্দর লাইট লাগিয়ে বেশ দর্শনীয় করেছে এরা। প্রথমে আসি প্যাসিফিক লাউঞ্জে। Posh রেস্টুরেন্ট। প্রচুর ব্যয়বহুল। মধ্যবিত্তের জন্য নয়। কিন্তু পুরোই 5-star hotel এর মত ফিলিং। অসাধারণ ইন্টিরিওর ডিজাইন। প্রচুর ছবি তোলার জায়গা। বাচ্চাদের জন্য চরম উপভোগ্য। হ্যাভোক আছে, দোলনা আছে। মশা থেকে বাঁচানোর জন্য তারা ধোয়ার ব্যবস্থা করেছিল। বড় বড় পাত্রে মশাল জ্বালিয়ে মশা তাড়ানোর ব্যবস্থা 😀 খাবার সুস্বাদু। জুস খেলে মনে হয় যেন সব raw item দিয়ে বানিয়ে দিয়েছে, একদম ফ্রেশ। এরপর সী-ল্যাম্প বীচ ক্যাফে। কাঠ দিয়ে বানানো সুন্দর জায়গা। এদের সার্ভিস খুব ভাল, বসার সাথে সাথে মশার কয়েল দিয়ে গেছে। কিছু লাগবে কিনা খোজ নিয়েছে বারবার। ইনডোর এবং আউটডোর দুইটা অংশ। আউটডোর থেকে সমুদ্র দেখা যায়, সমুদ্রের শব্দ শোনা যায়। ইন্টেরিওর কিছুটা ভিন্ন। সচরাচর রেস্টুরেন্টের মত নয়। স্যান্ডী বীচ রেস্টুরেন্টের ইন্টেরিওর সাধারণ রেস্টুরেন্টের মত । তবে এটাও বীচের পাশে ও দুইটি অংশ আছেঃ ইনডোর ও আউটডোর। বেশ সুন্দর দেখতে। দাম মধ্যবিত্তের নাগালের ভেতর। সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত। মশার জন্য মশার কয়েল দিয়েছিল। তবে এদের দুইটি সমস্যা দেখেছিলাম। তাদের বেসিন বেশ বেশ দূরে। অনেকটা ঘুরে যেতে হয় হাত ধোয়ার জন্য। আরেকটি সমস্যা হল আমরা যেদিন গিয়েছি সেদিন একজন স্ট্যাফদের উপর চেঁচাচ্ছিল। মালিক কিংবা স্ট্যাফ কোওরডিনেটর হবেন হয়ত। আমরা গেছি রিল্যাক্স করতে। তার মধ্যে এমন চেঁচামেচি ভালো লাগছিলনা। খাবার এভারেজ, আহামরি নয়, তবে খারাপও লাগেনি।

সান ড্যান্সার ক্যাফেঃ মেরিন ড্রাইভের শুরুতে এই রেস্টুরেন্ট আমাদের ফেবারিট কক্সবাজারে। অসাধারণ টেস্টি খাবার। স্পেশালি তাদের ‘থালি’ আইটেমগুলি ও জুস। তাদের শুধু ডাল দিয়ে এক প্লেট ভাত খাওয়া যায়। অসাধারণ ইন্টিরিওর। Posh look. দাম বেশি হলেও worth it. তাদের একজন সার্ভিস বয় প্রায় ২০ মিনিট আমাদের বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরেছেন নিজে থেকে অফার করে যাতে আমরা খেয়ে নিতে পারি। Strawberry Nogilla juice item is highly recommended.

কিছু টিপসঃ লোকাল ভাড়ায় চড়বেন। অটো রিজার্ভ করবেন না। অটোওয়ালা রিজার্ভ যেতে চাইলেও রাজী হবেন না। অপেক্ষা করবেন পরের অটোর জন্য। রিকশা ভাড়া চায়ের দোকান থেকে শুনে নিবেন। ঝিনুকের মালা কিংবা শো-পিস কেনার জন্য কয়েকটি দোকানে দামাদামি করবেন এবং একটু দাড়িয়ে দেখবেন কত দিয়ে বেচছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের নম্বর সেভ করে রাখবেন। ফটো তোলার জন্য পিস হিসাবে নয়, পোজ হিসাবে ডিল করবেন। বলবেন ২০ পোজে ছবি তুলব, ১০০-১৫০ টাকা। এবার সে ৩০০ ছবি তুললেও ওই টাকাই দেবেন এমনভাবে কথা বলে নিবেন।

Photo Album